শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, সেবা করার সুযোগ পেলে তিনি অবশ্যই আগামীতে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং ইনশাআল্লাহ, এই আওয়ামী লীগ যদি জনগণকে সেবা করার সুযোগ পায় অবশ্যই বাংলাদেশ আগামীতে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।’
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর, একরকম জোর করে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা-মা সব হারিয়ে ফিরে এসেছিলাম এবং একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ আমাকে তাদের সভাপতি নির্বাচন করেছিল, পাশাপাশি এদেশের জনগণ, তাদের আশ্রয়েই আমি এসেছিলাম। তাদের মাঝেই আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার হারানো বাবা, মা এবং ভাইদের স্নেহ। তাই এদেশের মানুষের জন্য যে কোন আত্মত্যাগেই আমি সবসময় প্রস্তুত।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট করি এবং আওয়ামী লীগের অগনিত নেতা-কর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তি সময়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানোর জন্য ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে এর নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। আর ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দ দুইটি বাদ পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে। প্রতিষ্ঠার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে আটক ছিলেন। তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণেরই সংগঠন এবং সবসময়ই এদেশের শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের জন্যই সংগ্রাম করে গেছে। আর এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কত পরিবার কষ্ট পেয়েছে, কত মানুষ জীবন দিয়েছে তাদের সেই আত্মত্যাগকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। মৃত্যুবরণকারিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নামের সাথেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জনমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম জড়িত। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলায় দলটি সবসময় অগ্রণী থেকেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছিলেন এবং সেই সময়ের মধ্যে তিনি একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করেন এবং আমাদের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করে যান। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৭৫ সালে দেশটি জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করে। দুর্ভাগ্য আমাদের ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে অমানিষার আঁধার নেমে নেমে আসে।
তিনি বলেন, সেদিন আমরা শুধু জাতির পিতাকেই হারাইনি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সব সম্ভাবনাকেও হারিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত হয় এবং যে স্লোগান দিয়ে এদেশের মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছিল সেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানও নির্বাসিত হয়। সেইসাথে ইতিহাস থেকেও জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর পর, আওয়ামী লীগ এবং পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।
আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী সবসময় ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা, ক্ষরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় দেশের মানুষের পাশে আছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, সরকারে থাকি আর বিরোধি দলে থাকি, যখনই বাংলার মানুষ কোনো সমস্যায় পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছে। এবারের চলমান সিলেট সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি যদি দেখেন তাহলেও দেখবেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই সেখানে আগে গেছে এবং তাদেরকে সাহায্য করেছে। আর এভাবে মানুষের সেবা করাটাই আমাদের কর্তব্য এবং দায়িত্ব, মানুষের সেবা করাটাই আমাদের আদর্শ এবং এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং আদর্শ- উল্লেখ করেন তিনি।
যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর সম্পূর্ণ বিসর্জন দেয়া হয়েছিল। সে সময় বার বার ক্যু হতো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনর মাধ্যমে আমরা ভোট ও ভাতের অধিকার ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি। আর যা করতে গিয়ে আমরা বহু নেতা-কর্মীকে হারিয়েছি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এই স্বাধীন বাংলাদেশেও অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। আর তাদের সেই আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আজ আমরা জনগণকে সেবা করার অধিকার যেমন পেয়েছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এবং আজ ধারাবাহিক গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।
সূত্র : বাসস